DRAG
Krishibid Properties Ltd.

Get In Touch

img

Krishibid Group, 801, Begum Rokeya Sarani, Kazipara, Mirpur, Dhaka – 1216

ফ্ল্যাট কেনার আগে ফাউন্ডেশন ও কংক্রিটের গুণগত মান চেনার উপায়

  • Home
  • Property
  • ফ্ল্যাট কেনার আগে ফাউন্ডেশন ও কংক্রিটের গুণগত মান চেনার উপায়
ফাউন্ডেশন ও কংক্রিটের

কেন ফাউন্ডেশন ও কংক্রিটের গুণগত মান যাচাই করা জরুরি

ফ্ল্যাট কেনা শুধু একটি বিনিয়োগ নয়, এটি একটি পরিবারের ভবিষ্যতের নিরাপত্তার সঙ্গেও যুক্ত। ফাউন্ডেশন হচ্ছে ভবনের মূল ভরকেন্দ্র, আর কংক্রিট হলো সেই কাঠামোর শক্তি। যদি ফাউন্ডেশন দুর্বল হয় বা কংক্রিটের মান খারাপ হয়, তাহলে ভবন সহজেই ফাটল ধরতে পারে, স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায় বা ভূমিকম্পে ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদপত্রে প্রায়ই দেখা যায়—অপরিকল্পিত নির্মাণ ও নিম্নমানের কংক্রিট ব্যবহারের কারণে ভবন ধসে পড়ছে। এজন্য ফ্ল্যাট কেনার আগে সঠিকভাবে ফাউন্ডেশন ও কংক্রিটের মান যাচাই করা একান্ত প্রয়োজন।

ফ্ল্যাট কেনার আগে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ

নকশা ও অনুমোদনের কাগজপত্র পরীক্ষা

যেকোনো ফ্ল্যাট কেনার আগে সবচেয়ে আগে যে বিষয়টি দেখা উচিত তা হলো অনুমোদিত নকশা। স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন বা রাজউক (RAJUK) থেকে অনুমোদিত নকশা ছাড়া কোনো ভবন আইনত বৈধ নয়।

নির্মাণস্থলে ভিজিটের গুরুত্ব

ফ্ল্যাট কেনার আগে নির্মাণস্থল সরাসরি দেখে আসা জরুরি। দূর থেকে সুন্দর করে সাজানো শোরুম দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভুল। সাইটে গেলে বোঝা যাবে ফাউন্ডেশনের কাজ কতটা মজবুতভাবে হয়েছে, এবং কংক্রিটে পর্যাপ্ত কিউরিং হচ্ছে কিনা।

ফাউন্ডেশনের গুণমান চেনার উপায়

ফাউন্ডেশনের গভীরতা ও মাটির পরীক্ষা

একটি ভবনের ফাউন্ডেশন কতটা গভীরে দেওয়া হয়েছে এবং মাটির মান কেমন, তা ভবনের আয়ুষ্কালের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। যদি জমি ভরাট হয় বা নরম মাটির ওপর হয়, তবে সঠিক সয়েল টেস্ট করা আবশ্যক।

পাইল ফাউন্ডেশনের স্থায়িত্ব যাচাই

বড় ভবন নির্মাণে সাধারণত পাইল ফাউন্ডেশন ব্যবহার করা হয়। এখানে স্টিল ও কংক্রিটের পাইল মাটির গভীরে বসানো হয়। একজন ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে পাইল টেস্ট করিয়ে নিলে এর মান যাচাই সম্ভব।

ফাউন্ডেশনের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা

ভবনের ফাউন্ডেশন অংশে পানি জমে থাকলে ধীরে ধীরে কংক্রিট দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই সঠিক ড্রেনেজ সিস্টেম আছে কিনা তা দেখা জরুরি।

কংক্রিটের গুণগত মান চেনার উপায়

কংক্রিটের মিশ্রণের অনুপাত পরীক্ষা

ভালো মানের কংক্রিট তৈরি হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ সিমেন্ট, বালি, পাথর ও পানির সঠিক অনুপাত মেনে। অনেক সময় খরচ বাঁচাতে ডেভেলপাররা সিমেন্ট কম ব্যবহার করে, যা ভবনের জন্য বিপজ্জনক।

কিউব টেস্ট বা কংক্রিট স্যাম্পল পরীক্ষা

কংক্রিট ঢালার পর ল্যাব টেস্টে কিউব টেস্ট করে এর চাপ সহনশীলতা (compressive strength) মাপা যায়। এই রিপোর্ট ডেভেলপারের কাছ থেকে চাইলে পাওয়া উচিত।

ফাটল ও দাগ পর্যবেক্ষণ

নতুন ভবনের দেয়ালে বা কলামে ফাটল দেখা দিলে বুঝতে হবে কংক্রিট সঠিকভাবে মিশ্রিত হয়নি।

স্ল্যাব ও কলামের পুরুত্ব যাচাই

BNBC কোড অনুযায়ী স্ল্যাব ও কলামের একটি নির্দিষ্ট পুরুত্ব থাকা উচিত। এর চেয়ে পাতলা হলে তা বিপজ্জনক সংকেত।

সাধারণত ব্যবহৃত স্ট্যান্ডার্ড ও কোড

বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (BNBC)

BNBC হলো বাংলাদেশে ভবন নির্মাণের জন্য সর্বজনীন মানদণ্ড। এই কোড অনুযায়ী ফাউন্ডেশন ও কংক্রিটের সর্বনিম্ন শক্তি, পুরুত্ব, মিশ্রণ এবং লোড সহ্যক্ষমতার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ফ্ল্যাট কেনার আগে ডেভেলপার BNBC মেনে চলছে কিনা, তা নিশ্চিত করা দরকার।

ইঞ্জিনিয়ার ও স্থপতির পরামর্শ

শুধু ডেভেলপারের কথায় ভরসা করা ঠিক নয়। নিরপেক্ষ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বা স্থপতির সঙ্গে পরামর্শ করলে ফাউন্ডেশন ও কংক্রিটের মান সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়।

ফ্ল্যাট কেনার সময় চুক্তিপত্রে কী লিখতে হবে

গুণগত মানের গ্যারান্টি

চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে—ভবন নির্মাণে কোন মানের রড, সিমেন্ট, বালি, পাথর ও কংক্রিট ব্যবহার করা হবে। প্রয়োজনে ব্র্যান্ডের নামও নির্দিষ্ট করা উচিত।

পরবর্তী রক্ষণাবেক্ষণ শর্ত

অনেক সময় ডেভেলপাররা নির্মাণ শেষ করে চলে যায়, পরে ফ্ল্যাট মালিকদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তাই চুক্তিতে অন্তত ২-৩ বছরের রক্ষণাবেক্ষণ সেবা পাওয়ার নিশ্চয়তা রাখতে হবে।

প্রতারণা থেকে বাঁচতে করণীয়

ভুয়া নথি চিনে ফেলা

ডেভেলপাররা অনেক সময় ভুয়া অনুমোদনের কাগজপত্র দেখায়। আসল নথি যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ (যেমন রাজউক, সিটি কর্পোরেশন) থেকে সরাসরি তথ্য নেওয়া ভালো।

তৃতীয় পক্ষের ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ

ফ্ল্যাট কেনার আগে একজন স্বাধীন ইঞ্জিনিয়ার ভাড়া করে ভবনের ফাউন্ডেশন ও কংক্রিটের মান পরীক্ষা করানো সবচেয়ে নিরাপদ উপায়। এর খরচ খুব বেশি না হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদে বড় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।

খরচ কমাতে গিয়ে কী ভুল হয়

নিম্নমানের কংক্রিট ব্যবহার

অনেক ডেভেলপার খরচ কমাতে গিয়ে কম মানের কংক্রিট বা বালি ব্যবহার করে। এর ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই ভবনে ফাটল, চিড় ও পানির স্যাঁতসেঁতে সমস্যা দেখা দেয়।

পর্যাপ্ত কিউরিং না করা

কংক্রিট ঢালার পর অন্তত ৭ দিন পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য অনেক সময় এটি এড়িয়ে যায়, ফলে কংক্রিট শক্তি হারায়।

বাস্তব উদাহরণ ও অভিজ্ঞতা

ঢাকায় একাধিক স্থানে দেখা গেছে—নিম্নমানের ফাউন্ডেশন ও কংক্রিটের কারণে ভবন ধসে পড়েছে। রাজউক ও গণমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, এসব ভবনের বেশিরভাগই BNBC মেনে তৈরি হয়নি।

একজন ক্রেতা ফ্ল্যাট কেনার আগে স্বাধীন ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে টেস্ট করিয়েছিলেন। তিনি আবিষ্কার করেন, ব্যবহৃত রডের মান সঠিক নয়। পরে তিনি চুক্তি বাতিল করেন এবং সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতি থেকে বেঁচে যান।

উপসংহার

ফ্ল্যাট কেনার আগে ফাউন্ডেশন ও কংক্রিটের গুণগত মান যাচাই করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি শুধু আপনার বিনিয়োগকে সুরক্ষিত রাখে না, বরং পরিবারের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করে। নকশা ও অনুমোদনের কাগজপত্র যাচাই করা, সাইট পরিদর্শন করা, কংক্রিট টেস্ট রিপোর্ট দেখা এবং একজন স্বাধীন ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নেওয়া—এই কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলে আপনি সহজেই প্রতারণা থেকে রক্ষা পাবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *