DRAG
Krishibid Properties Ltd.

Get In Touch

img

Krishibid Group, 801, Begum Rokeya Sarani, Kazipara, Mirpur, Dhaka – 1216

ফ্ল্যাট কেনার আগে দেয়াল ও পেইন্টের মান কীভাবে যাচাই করবেন?

  • Home
  • Apartment
  • ফ্ল্যাট কেনার আগে দেয়াল ও পেইন্টের মান কীভাবে যাচাই করবেন?
ফ্ল্যাট কেনার আগে দেয়াল ও পেইন্টের মান যাচাই

একটি ফ্ল্যাট কেনা শুধু একটি সম্পত্তি অর্জন নয়, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ ও স্বপ্ন পূরণের বিষয়। তাই শুধু ফ্ল্যাটের লোকেশন বা ডিজাইন নয়, এর দেয়াল ও পেইন্টের মান যাচাই করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও সস্তা পেইন্ট ব্যবহার করলে কয়েক বছরের মধ্যেই দেয়ালে ফাটল, আর্দ্রতার দাগ কিংবা রঙ উঠে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। তাই আগে থেকেই কিছু কৌশল মেনে চললে আপনি প্রতারণা এড়িয়ে একটি ভালো মানের ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন।

কেন দেয়াল ও পেইন্টের মান যাচাই করা জরুরি

স্থায়িত্ব ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহার

দেয়াল ও পেইন্টের মান ভালো হলে ফ্ল্যাট বহু বছর মেরামত ছাড়া টিকে থাকে। অন্যথায় প্রতি দুই-তিন বছর পর পর রিপেয়ার করতে গিয়ে খরচ অনেক বেড়ে যায়।

স্বাস্থ্য ও পরিবেশের প্রভাব

নিম্নমানের পেইন্টে ক্ষতিকর কেমিক্যাল (VOC) থাকতে পারে যা দীর্ঘমেয়াদে শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি এমনকি ফুসফুসের সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব রঙ ব্যবহার করা জরুরি।

বিনিয়োগ ও পুনঃবিক্রয়মূল্যের দিক

একটি ভালো মানের ফ্ল্যাট সবসময় বেশি দামে বিক্রি করা যায়। দেয়াল ও পেইন্ট যদি অক্ষত থাকে, তাহলে এটি সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে বাড়তি বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে।

ফ্ল্যাটের দেয়াল মান যাচাইয়ের ধাপ

ইট ও কংক্রিটের গুণমান পরীক্ষা

ভালো মানের ফ্ল্যাটের দেয়াল সাধারণত শক্ত ইট ও কংক্রিট দিয়ে তৈরি হয়। হাত দিয়ে টোকা দিলে যদি ফাঁপা শব্দ আসে, তাহলে দেয়ালের গুণমান নিয়ে সন্দেহ হতে পারে।

দেয়ালের পুরুত্ব ও সোজাসুজি পরিমাপ

একটি বাইরের দেয়ালের পুরুত্ব সাধারণত ৯-১০ ইঞ্চি হওয়া উচিত। ভেতরের দেয়াল ৪-৬ ইঞ্চি হলে সমস্যা নেই, তবে খুব পাতলা হলে তা ভবিষ্যতে ফাটল ধরাতে পারে।

স্যাঁতসেঁতে বা ফাটল চিহ্নিত করা

দেয়ালের কোনায় বা জানালার পাশে আর্দ্রতার দাগ থাকলে বুঝবেন ওয়াটারপ্রুফিং সঠিকভাবে করা হয়নি। ছোট ফাটলগুলো উপেক্ষা করা যাবে না কারণ এগুলো বড় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

প্লাস্টার ও ফিনিশিংয়ের মান যাচাই

দেয়ালের প্লাস্টার যদি সমান না হয় বা সহজেই খসে পড়ে, তাহলে এটি নিম্নমানের কাজের ইঙ্গিত দেয়।

পেইন্টের মান যাচাইয়ের উপায়

পেইন্টের ধরন ও ব্র্যান্ড যাচাই

সব ব্র্যান্ডের পেইন্ট এক রকম নয়। পরিচিত ও বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড বেছে নেওয়া উচিত।

রঙের সমানতা ও টেক্সচার পরীক্ষা

দেয়ালের প্রতিটি অংশে রঙ একরকম কিনা তা লক্ষ্য করুন। অসম রঙ মানে একাধিকবার রঙ মিশ্রণ বা কম মানের পেইন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।

স্ক্র্যাচ বা আর্দ্রতা প্রতিরোধ ক্ষমতা

দেয়ালে হালকা স্ক্র্যাচ দিলে যদি সহজেই রঙ উঠে যায়, তবে পেইন্ট টেকসই নয়।

গন্ধ ও ক্ষতিকর কেমিক্যালের উপস্থিতি

অতিরিক্ত তীব্র গন্ধ মানে VOC মাত্রা বেশি। ভালো মানের পেইন্টে গন্ধ হালকা হয় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি কম থাকে।

বিশেষজ্ঞ বা ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে টেকনিক্যাল চেক

ময়েশ্চার মিটার ও ফাটল ডিটেক্টর ব্যবহার

প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়াররা সাধারণত ময়েশ্চার মিটার ব্যবহার করে দেয়ালের ভেতরের আর্দ্রতার পরিমাণ পরিমাপ করেন। এতে বোঝা যায় দেয়ালের ভেতরে লিকেজ বা পানি জমা হচ্ছে কিনা। একইভাবে ক্র্যাক ডিটেক্টর দিয়ে দেয়ালে লুকানো ফাটল চিহ্নিত করা সম্ভব।

পেইন্ট লেয়ার কাউন্ট ও টেস্ট রিপোর্ট

কোনো কোনো ডেভেলপার কম খরচে একটি কোট রঙ করে সেটিকে মাল্টিপল লেয়ার হিসেবে দাবি করে। অথচ ভালো মানের দেয়ালে অন্তত দুই-তিনটি লেয়ার পেইন্ট থাকা উচিত। প্রয়োজনে ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে টেস্ট রিপোর্ট সংগ্রহ করতে পারেন।

দেয়াল ও পেইন্ট সম্পর্কিত প্রতারণা থেকে সাবধান

নিম্নমানের রঙকে প্রিমিয়াম বলে দাবি

অনেক সময় সস্তা লোকাল পেইন্ট ব্যবহার করে ডেভেলপাররা সেটিকে ব্র্যান্ডেড রঙ বলে প্রচার করে। তাই কেনার আগে পেইন্টের আসল ক্যান বা বিল দেখতে চাইতে হবে।

পাতলা প্লাস্টার লুকাতে একাধিক কোট

পাতলা প্লাস্টার দিলে দেয়ালের স্থায়িত্ব কমে যায়। একাধিক কোট রঙ দিয়ে সেটি ঢেকে ফেলা হলেও ভবিষ্যতে ফাটল ধরতে বাধ্য।

ক্রেতাদের জন্য চেকলিস্ট

ফ্ল্যাট হস্তান্তরের আগে যেসব কাগজপত্র চাইতে হবে

  • বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল টেস্ট রিপোর্ট

  • পেইন্ট ও প্লাস্টারের ইনভয়েস

  • ওয়াটারপ্রুফিং ও ড্যাম্প-প্রুফ সার্টিফিকেট

ডেভেলপারকে যেসব প্রশ্ন করবেন

  1. কোন ব্র্যান্ডের পেইন্ট ব্যবহার করা হয়েছে?

  2. দেয়ালের পুরুত্ব কত ইঞ্চি রাখা হয়েছে?

  3. ওয়াটারপ্রুফিংয়ের জন্য কোন টেকনিক ব্যবহার করা হয়েছে?

  4. ভবিষ্যতে ফাটল বা আর্দ্রতার সমস্যা হলে কতদিন ওয়ারেন্টি থাকবে?

দেয়াল ও পেইন্ট রক্ষণাবেক্ষণের টিপস

নিয়মিত পরিস্কার ও রিপেইন্টিং সাইকেল

দেয়াল পরিষ্কার রাখলে ধুলো-ময়লা জমে থাকে না। সাধারণত প্রতি ৫-৭ বছর অন্তর ফ্ল্যাটে নতুন রঙ করা উচিত।

আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের উপায়

  • রান্নাঘর ও বাথরুমে ভেন্টিলেশন ফ্যান ব্যবহার করুন

  • এয়ার কন্ডিশনার বা ডিহিউমিডিফায়ার ব্যবহার করুন

  • জানালার চারপাশে সিলিং ঠিক আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করুন

খরচ বনাম মান – কীভাবে ব্যালান্স করবেন

বাজেট ফ্ল্যাট বনাম প্রিমিয়াম ফ্ল্যাট

বাজেট ফ্ল্যাটে সাধারণত লোকাল ব্র্যান্ডের পেইন্ট ও মাঝারি মানের প্লাস্টার ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে প্রিমিয়াম ফ্ল্যাটে নামিদামি ব্র্যান্ড ও টেকসই ওয়াটারপ্রুফিং সল্যুশন থাকে।

লং-টার্ম খরচের হিসাব

প্রথমে কিছুটা বেশি খরচ হলেও ভালো মানের দেয়াল ও পেইন্ট দীর্ঘমেয়াদে রিপেয়ার খরচ কমিয়ে দেয়। তাই মানের সঙ্গে আপস না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।বর্ষাকালের আগে বা পরে পরীক্ষা করা সবচেয়ে ভালো, কারণ এই সময়েই আর্দ্রতার সমস্যা সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে।

উপসংহার

একটি ফ্ল্যাট কেনা জীবনের অন্যতম বড় বিনিয়োগ। তাই শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে সিদ্ধান্ত নিলে চলবে না। বরং দেয়াল ও পেইন্টের মান পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি টেকসই, স্বাস্থ্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী একটি ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করছেন। ফ্ল্যাট কেনার আগে কিছু সহজ পরীক্ষা, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ এবং সঠিক তথ্য যাচাই করলেই আপনি নিশ্চিন্তে আপনার স্বপ্নের বাসস্থান বেছে নিতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *