DRAG
Krishibid Properties Ltd.

Get In Touch

img

Krishibid Group, 801, Begum Rokeya Sarani, Kazipara, Mirpur, Dhaka – 1216

রেডি না আন্ডার-কনস্ট্রাকশন—কোন ফ্ল্যাটে বেশি লাভ? রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগে সঠিক সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ গাইড

  • Home
  • Real Estate
  • রেডি না আন্ডার-কনস্ট্রাকশন—কোন ফ্ল্যাটে বেশি লাভ? রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগে সঠিক সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ গাইড
রেডি না আন্ডার-কনস্ট্রাকশন—কোন ফ্ল্যাটে বেশি লাভ?

রিয়েল এস্টেট বাজারে বিনিয়োগের বর্তমান প্রবণতা

বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট খাত এখনো একটি স্থিতিশীল ও লাভজনক বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী শহরে ফ্ল্যাট বিনিয়োগ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনেকেই মনে করেন, ফ্ল্যাট কেনা মানেই নিরাপদ ভবিষ্যৎ—চাই তা নিজের বসবাসের জন্য হোক, বা ভবিষ্যতে ভাড়ার আয়ের উৎস হিসেবে।

বর্তমানে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপাররা দুটি প্রধান ধরণের প্রকল্প অফার করে—রেডি ফ্ল্যাটআন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাট
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—কোনটি বেশি লাভজনক? এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে বিনিয়োগকারীর উদ্দেশ্য, বাজেট, ঝুঁকি সহ্যক্ষমতা, এবং বাজারের পরিস্থিতির ওপর।

রেডি ফ্ল্যাট কী এবং এর বৈশিষ্ট্য

রেডি ফ্ল্যাট বলতে বোঝায় এমন ফ্ল্যাট যা ইতোমধ্যেই সম্পূর্ণ নির্মিত এবং তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেতার দখলে দেওয়া সম্ভব।
এই ফ্ল্যাটে ক্রেতা সরাসরি গিয়ে দেখতে পারেন—ফ্লোরিং, টাইলস, বাথরুম ফিটিংস, ভিউ, লোকেশন—সবকিছু।

রেডি ফ্ল্যাট কেনার প্রধান সুবিধাগুলো

  1. তাৎক্ষণিক বসবাস: ক্রেতা সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাটে উঠে যেতে পারেন, কোনও অপেক্ষা বা বিলম্ব নেই।

  2. ভাড়ার আয়ের সুযোগ: রেডি ফ্ল্যাট দ্রুত ভাড়া দেওয়া যায়, ফলে ROI তৎক্ষণাৎ শুরু হয়।

  3. নিশ্চিত নির্মাণ মান: যেহেতু কাজ শেষ, ক্রেতা সহজেই মান যাচাই করতে পারেন।

  4. আইনি স্বচ্ছতা: প্রকল্পের সমস্ত অনুমোদন ও রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন থাকে।

রেডি ফ্ল্যাট কেনার সীমাবদ্ধতা বা ঝুঁকি

  • দাম বেশি: নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ায় মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে।

  • সীমিত বিকল্প: কাঠামো বা ডিজাইনে পরিবর্তনের সুযোগ নেই।

  • লোকেশন চ্যালেঞ্জ: ভালো লোকেশনের রেডি ফ্ল্যাট দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়, ফলে বিকল্প কমে যায়।

আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাট কী?

আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাট হলো এমন ফ্ল্যাট যা এখনো নির্মাণাধীন বা পরিকল্পনা পর্যায়ে রয়েছে।
এই ধরনের ফ্ল্যাট সাধারণত কম দামে বুকিং করা যায়, এবং নির্মাণ শেষ হওয়ার পর তার বাজারমূল্য বৃদ্ধি পায়।

আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের সুবিধা

  1. কম দাম ও প্রি-লঞ্চ অফার: শুরুতেই বিনিয়োগ করলে তুলনামূলক কম দামে ফ্ল্যাট পাওয়া যায়।

  2. কাস্টমাইজেশন সুবিধা: ক্রেতা নিজের পছন্দ অনুযায়ী ডিজাইন বা ফিনিশিং পরিবর্তন করতে পারেন।

  3. মূলধন বৃদ্ধি: নির্মাণ শেষ হওয়ার পর বাজারমূল্য বেড়ে যায়, যা বিনিয়োগে লাভ আনে।

  4. ফ্লেক্সিবল পেমেন্ট: কিস্তিতে অর্থ পরিশোধের সুবিধা থাকে।

আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাটের ঝুঁকি বা অসুবিধা

  • প্রকল্প বিলম্ব: নির্মাণে বিলম্ব সাধারণ ঘটনা, যা ক্রেতার পরিকল্পনা ব্যাহত করে।

  • নির্মাণ মানের অনিশ্চয়তা: চূড়ান্ত ফলাফল দেখা যায় না, ফলে গুণমানের নিশ্চয়তা কম।

  • ডেভেলপার নির্ভরতা: প্রকল্পের সাফল্য পুরোপুরি নির্ভর করে ডেভেলপারের বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর।

দুই ধরনের ফ্ল্যাটের তুলনামূলক বিশ্লেষণ

দিকরেডি ফ্ল্যাটআন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাট
দামতুলনামূলক বেশিতুলনামূলক কম
ROI (রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট)স্থিতিশীল কিন্তু ধীরদ্রুত বৃদ্ধি সম্ভাবনা
ঝুঁকিকমকম
তাৎক্ষণিক ব্যবহারসম্ভবঅসম্ভব
কাস্টমাইজেশনসম্ভব নয়সম্ভব
ভাড়ার সুবিধাতৎক্ষণাৎনির্মাণ শেষে

মূল্য বৃদ্ধি ও রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (ROI)

রেডি ফ্ল্যাটে ROI শুরু হয় ভাড়া থেকে, আর আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাটে ROI আসে মূলধন বৃদ্ধির মাধ্যমে।
যদি আপনি ভাড়ার মাধ্যমে নিয়মিত আয় চান, রেডি ফ্ল্যাটই সেরা।
কিন্তু যদি আপনি ভবিষ্যতের বাজারমূল্য বৃদ্ধির দিকে তাকিয়ে বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে আন্ডার-কনস্ট্রাকশন প্রকল্প লাভজনক হতে পারে।

ক্রেতার দৃষ্টিকোণ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশল

রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করার আগে শুধুমাত্র ফ্ল্যাটের দাম বা অবস্থান নয়, নিজের উদ্দেশ্য ও আর্থিক সক্ষমতা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা জরুরি। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করা হলো যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিবেচনা করা উচিতঃ

১. বিনিয়োগের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করুন

আপনি কি নিজে বসবাসের জন্য, নাকি ভাড়ার আয়ের জন্য ফ্ল্যাট কিনছেন?

  • যদি নিজের থাকার জন্য হয়, রেডি ফ্ল্যাট ভালো পছন্দ—কারণ এটি সময় বাঁচায় ও অনিশ্চয়তা কম।

  • বিনিয়োগের উদ্দেশ্য হলে আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাটে বেশি লাভের সম্ভাবনা থাকে।

২. বাজেট ও আর্থিক পরিকল্পনা

রেডি ফ্ল্যাটে এককালীন অর্থ প্রদানের প্রয়োজন হয়, অন্যদিকে আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাটে কিস্তিতে পেমেন্ট করা যায়।
যাদের ক্যাশ ফ্লো সীমিত, তারা কিস্তির সুবিধাযুক্ত আন্ডার-কনস্ট্রাকশন প্রকল্প বেছে নিতে পারেন।

৩. লোকেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা

ফ্ল্যাটের লোকেশনই তার ভবিষ্যৎ বাজারমূল্য নির্ধারণ করে।
মেট্রোরেল, স্কুল, হাসপাতাল ও মার্কেটের কাছাকাছি এলাকায় প্রকল্প নির্বাচন করলে পুনরায় বিক্রির সময় বেশি দাম পাওয়া যায়।

৪. ডেভেলপার কোম্পানির সুনাম যাচাই করুন

রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগের সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে ডেভেলপারের উপর।
বিশ্বস্ত ও অভিজ্ঞ কোম্পানির প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কমে যায়।

আইনি ও নথিপত্র যাচাইয়ের গুরুত্ব

রিয়েল এস্টেট ক্রয়ে আইনি যাচাই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। অনেক বিনিয়োগকারী এই অংশে অবহেলা করেন, যা পরবর্তীতে বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।

রেডি ফ্ল্যাটে যাচাইয়ের বিষয়সমূহ:

  • ফ্ল্যাটের হোল্ডিং নাম্বাররেজিস্ট্রেশন কাগজপত্র

  • রাজউক বা সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন

  • বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সংযোগের বৈধতা

আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাটে যাচাইয়ের বিষয়সমূহ:

  • জমির মালিকানা দলিল ও মিউটেশন কপি

  • জমির রেকর্ড (খতিয়ান, পর্চা) যাচাই করা।

  • ডেভেলপমেন্ট এগ্রিমেন্টপার্টনারশিপ চুক্তি পর্যালোচনা করা।

  • প্রকল্পের RAJUK অনুমোদন নম্বর নিশ্চিত করা।

একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সাহায্যে যাচাই করানো সবসময়ই উত্তম।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও বাস্তব উদাহরণ

বাংলাদেশের শীর্ষ রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগকারীদের উচিত দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যবাজার প্রবণতা বিবেচনা করা।

🔹 রিয়েল এস্টেট অ্যানালিস্ট মাহবুব রহমান বলেন,

“আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ করলে তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় ২০–৩০% মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে, যদি লোকেশন ভালো হয়।”

🔹 অপরদিকে, বাজার বিশ্লেষক রুবিনা হক বলেন,

“রেডি ফ্ল্যাট ক্রেতাদের জন্য নিরাপদ পছন্দ, বিশেষত যারা দ্রুত বসবাস করতে চান বা ঝুঁকি এড়াতে চান।”

বাস্তব উদাহরণ:
ধরা যাক, গুলশানে একটি আন্ডার-কনস্ট্রাকশন প্রকল্পে ২০২0 সালে ফ্ল্যাটের দাম ছিল প্রতি বর্গফুটে ৭,৫০০ টাকা।
২০২5 সালে একই ফ্ল্যাটের বাজারমূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১,০০০ টাকা প্রতি বর্গফুট—অর্থাৎ ৪৫% বৃদ্ধি।

এদিকে রেডি ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে মূল্য বৃদ্ধির হার ছিল ২০–২৫%।
তবে রেডি ফ্ল্যাটের মালিক ভাড়ার আয় পেয়েছেন প্রতি মাসে গড়ে ৬০,০০০–৭০,০০০ টাকা, যা সমন্বিতভাবে ROI ভারসাম্য রক্ষা করেছে।

কোন ফ্ল্যাটে বেশি লাভ?—চূড়ান্ত বিশ্লেষণ

রেডি ফ্ল্যাটে লাভ:

  • দ্রুত ভাড়ার আয় শুরু হয়।

  • ঝুঁকি কম এবং আইনি স্বচ্ছতা থাকে।

  • যারা তাৎক্ষণিক বসবাস চান, তাদের জন্য এটি আদর্শ।

আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাটে লাভ:

  • দীর্ঘমেয়াদে মূলধন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি।

  • কাস্টমাইজেশনের সুযোগ ও কম প্রাথমিক বিনিয়োগ।

  • রিয়েল এস্টেট মার্কেটের ভবিষ্যৎ বৃদ্ধিতে বেশি লাভজনক।

সারসংক্ষেপে:

আপনি যদি দ্রুত ফলাফল চান, রেডি ফ্ল্যাট বেছে নিন।
আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদি লাভ চান, আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাটই বেশি লাভজনক।

উপসংহার: বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর পছন্দ কী হওয়া উচিত

রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগে সাফল্যের মূলমন্ত্র হলো জ্ঞান, যাচাই, ও ধৈর্য
যারা স্থিতিশীল আয় , তাদের জন্য রেডি ফ্ল্যাট আদর্শ।
অন্যদিকে যারা দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিতে মূলধন বৃদ্ধির সুযোগ খুঁজছেন, তাদের জন্য আন্ডার-কনস্ট্রাকশন ফ্ল্যাটে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *